ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের তথ্য মিলছে এভিজেএমের ঘটনায়- ইন্ধনদাতাদের শাস্তি দাবি

লিড নিউজ

ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের তথ্য মিলছে এভিজেএমের ঘটনায়- ইন্ধনদাতাদের শাস্তি দাবি

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি নাজমুল হাসান:

মুন্সিগঞ্জে এভিজেএম গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষক হেনস্তার ঘটনা পুরোটাই সাজানো নাটক করা হয়েছে। ২৯ জন শিক্ষক মনোরঞ্জন ধরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন এবং মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দাখিল করলেও অধিকাংশ শিক্ষক জানেনা আসলে কি লেখা রয়েছে অভিযোগ পত্রে। কেউ কেউ বলছেন অন্যেরা স্বাক্ষর দিয়েছে বলে আমরাও দিয়েছি। সরকারি চাকুরী করেও শিক্ষকরা জানেইনা সরকারি চাকুরীবিধির আচরন বিধিমালা৷
কেউ কেউ আবার অকপটে স্বীকার করছেন যে, শিক্ষকরাই ক্ষেপিয়ে তুলেছে শিক্ষার্থীদের। এদিকে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বোকা বানিয়ে করেছে নিজেদের স্বার্থ হাসিল। কোন কোন শিক্ষক স্বীকার করেছেন এ সমস্যার মূলে রয়েছে কোচিং বাণিজ্য ব্যবসা। এদিকে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর দেওয়া নিয়ে কেউ কেউ ভয়ে প্রকাশও করতে চায়নি সত্যটা৷ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিক্ষক আবু সাঈদ বলেন -” আমি ব্যস্ত রয়েছি। এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়৷ আমি অভিযোগের বিষয়টি পড়ে দেখিনি। আরিফ স্যার ও গফুর স্যার ভাল বলতে পারবেন এই বিষয়টা৷

এদিকে এক ফেসবুক পোষ্টে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুজ্জামেল জোবায়ের কমেন্টস করেন যে ,

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রীরা মনোরঞ্জনের বিরুদ্ধে আপত্তি তুললে পাশে দাড়াবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ “। এর ফলশ্রুতিতেই আরিফ হোসেন, আবদুল গফুর সরকার, রাসেল আহমেদ,জসিম উদ্দীন এবং আ.ন.ম মাহফুজের নেতৃত্বে চলে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। শিক্ষকদের নানান রকম চাপে ফেলে নেওয়া হয় তাদের স্বাক্ষর। স্বাক্ষর দেওয়া ২৯ জনের মধ্যে ৪ জন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন বিএড প্রশিক্ষণে। তাদের অনুপস্থিতিতে জালিয়াতি করে দেওয়া হয়েছে তাদের স্বাক্ষর৷ এছাড়া মনোরঞ্জন ধর দিবা শাখায় কর্মরত থাকলেও কিসের ভিত্তিতে প্রভাতী শাখার ১৫ জন শিক্ষক অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করলেন তা নিয়েও রয়েছে ধোয়াশা৷ বিদ্যালয়ে সদ্য যোগদানকৃত ৪ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরও নেওয়া হয় নানান ধরনের অপব্যাখ্যা দিয়ে৷

কোন কোন শিক্ষক জুনিয়র সহকর্মী দ্বারা হেনস্তার ভয়ে কথাই বলেনি সাংবাদিকদের সাথে৷ পুরো ঘটনার মাষ্টার মাইন্ড গণিত শিক্ষক আরিফ হোসেন এবং বিজ্ঞান শিক্ষক আবদুল গফুর সরকার৷

বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আজিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ইব্রাহিম কবিরের বদলির সাথে জড়িত ছিলেন মনোরঞ্জন ধর৷শুরুতে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে অন্যদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি৷ অথচ বাস্তবতা হলো প্রধানশিক্ষকের রিপোর্ট ব্যতীত কোন সহকারী শিক্ষকের পক্ষে কোন সিনিয়র শিক্ষককে বদলি করা সম্ভব না৷ সেই বদলি কালীন সময়ে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ক্ষেপিয়ে তুলে মনোরঞ্জন বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন গফুর সরকার ও রানা কুমার সরকার৷ গফুর সরকার তার নিজ কোচিংয়ে উসকে দেন শিক্ষার্থীদের। দুই শিক্ষার্থীদের কথোপকথনে যা অনেকটাই পরিষ্কার। কথোপকথনের এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায় – গফুর স্যার, রানা স্যার ও ইব্রাহীম স্যার মিলে এইডা করাইছে। এইডা ষড়যন্ত্রই হইছে। স্যাররা সবাই মিলা এইডা করাইছে। গফুর স্যার তার কোচিংয়ে মনোরঞ্জন স্যারকে নিয়ে অনেক কথাই কইছে।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলেই হতবাক এমন ঘটনায়। অভিভাবক মহলের দাবি, শিক্ষকরা নিজেদের ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে এভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করাটা নৈতিকতা বিবর্জিত। ইন্ধনদাতা শিক্ষকদের দ্রুত বিদ্যালয় থেকে অপসারনের দাবি জানাচ্ছেন অভিভাবকরা৷

বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আসমা আক্তার বলেন – সবাই দিয়েছে বলে আমিও দিয়েছি। তবে তাদের মূল সমস্যা কোচিং ব্যবসা নিয়ে৷

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, এভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষ্যাপিয়ে তোলা ঠিক হয়নি। আমি একজন শিক্ষক হয়ে, চাইবো কোন শিক্ষক এভাবে অপমানিত হোক। এখানে আমি নতুন এসেছি। এখানকার ইন্টারনাল পলিটিকস নিয়ে কোন মন্তব্য করব না, সমস্যা হবে।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক রুবিয়া আক্তার জানান – আমার কাছে আসার পর আমি বলেছি স্বাক্ষর কেন নিবেন। আগে সবাই দিলে পরে আমি স্বাক্ষর দিব।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাকিল আহমেদ জানান – শুরুতে যারা স্বাক্ষর দিয়েছে, তাদের সাথে কথা বলেন৷ তারা এ বিষয়টা ভাল জানে।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক আইয়ুব আলী বলেন – ইন্ধনদাতারা বিচারের আওতায় না আসলে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরী হবে এবং ইন্ধনদাতারা উৎসাহ পাবে। ছাত্র- জনতার রক্তের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতায় এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা মুন্সীগঞ্জ বাসীর জন্য লজ্জাজনক৷ প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ক্ষমতা থাকে প্রধানশিক্ষকের সাথে, অথচ সহকারী শিক্ষককে বলা হচ্ছে দূর্নীতি বাজ। এর চেয়ে নির্লজ্জ মিথ্যা আর কি হতে পারে। ইন্ধনদাতাদের বিচারে এগিয়ে আসতে হবে জাতির সূর্য সন্তান, জাতির গর্বের প্রতীক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতাকে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *