চলতি মাসের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত, সহিংসতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
বাংলাদেমের এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সীমানা ছাড়িয়ে ভারতেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের বিষয় একের পর এক গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে তারা জানায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে। এমন ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় ভারতের অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রিপাবলিক বাংলা সর্বাধিক ৫টি গুজব প্রচার করেছে। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ এবং লাইভ মিন্ট, যারা প্রত্যেকে অন্তত ৩টি করে গুজব প্রকাশ করেছে। এছাড়া, রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক অন্তত ২টি করে গুজব প্রচার করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলা চিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ভিত্তিহীন দাবি, ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূসের ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি, পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়া গুজব, বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য, চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি এবং বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবর।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনার নামে দিল্লি থেকে জনগণের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়। যেখানে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। তবে জানা যায়, শেখ হাসিনা এমন কোনো চিঠি দেননি। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই চিঠিটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে ভারতের আগরতলা ভিত্তিক দৈনিক ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যত’ পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে তারিখসহ প্রকাশিত হয়। এরপর, ওই পত্রিকার স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে এবং পরবর্তীতে ভারতের ও বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমেও এটি প্রচারিত হয়।
ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। এ দাবির সঙ্গে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তির ছবিও প্রকাশিত হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি ড. ইউনূসের নয়। ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের কিংবা বাংলাদেশেরও কোনো ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে, ড. ইউনূস সুস্থ রয়েছেন।